নিজস্ব সংবাদদাতা: ভারত সরকার দাবি করেছে এখনও অবধি দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪লক্ষ মানুষের। এই সংখ্যাটিকে বরাবরই সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে। কিছুদিন আগেও ব্রিটেনের একটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছিল ভারতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আড়াল করা হচ্ছে। এমনকি নিউ ইয়র্ক টাইমস যখন দাবি করেছিল যে ভারতে অন্ততঃ ৬লক্ষ মানুষ মারা গেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে তখনও ভারত সরকার তা অস্বীকার করেছিল। এবার নতুন একটি গবেষণা সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে জানিয়েছে, ভারতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সরকারের ঘোষণার চাইতে ১০গুনেরও বেশি এবং তা ৪৯লক্ষ বা অর্ধকোটির কাছাকাছি।
মঙ্গলবার এমনই গবেষণা রিপোর্ট সামনে এনেছে দ্য সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট (Center for Global Devlopment)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটন ভিত্তিক এই গবেষনা সংস্থাটির তরফে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে তাঁদের এই গবেষণার ভিত্তিও। তারা বলেছে, দেশগুলির দেওয়া মৃত্যুর তথ্যের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট, সেরোলোজিক্যাল পদ্ধতি এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার ভিত্তিতে এই তথ্য উঠে এসেছে। নরেন্দ্র মোদি সরকারেরই প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রাহ্মমানিয়াম বলেছেন,’ প্রকৃত মৃত্যু হয়েছে শয়ে শয়ে বা হাজারে হাজারে নয়, লাখে লাখে। এবং এটাই হচ্ছে ভারতের সর্বাধিক বিপর্যয়কারী মর্মান্তিক মৃত্যুর দিনলিপি।”
করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, আমেরিকা ও ব্রাজিলের ঠিক পরেই। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট(Delta Variant)-র দাপটে গত এপ্রিল-মে মাসে আছড়ে পড়া দ্বিতীয় ঢেউয়ে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে কেবল মে মাসেই। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র সরাসরি সংক্রমণেই নয়, যাবতীয় কারণে মৃত্যুকেও প্যানডেমিক পূর্ব সময়কালের সঙ্গে তুলনা করে মৃতের সংখ্যার এই আন্দাজ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথনও টুইট করে লেখেন, প্রতিটি দেশেই অতিরিক্ত মৃত্যুহার ধরেই করোনা সংক্রমণে আসল মৃত্যু সংখ্যার হিসাব করা উচিত। এতে আগামিদিনে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উপর কীধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে, তা আন্দাজ করা যাবে।
এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর, করোনার ভয়ানক চিত্র ভারতের সামনে ফুটে উঠেছে, যা চিন্তায় ফেলেছে সকলকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে প্রকৃত করোনায় মৃতের সংখ্যা গোপন করা হয়েছে। এর জন্য যেমন দায়ী কেন্দ্র ঠিক তেমনই দায়ী রাজ্যগুলি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউতে মৃত্যু হয়েছে ২০ লক্ষ লোকের। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এত বড় ক্ষতি ভারতে এর আগে দেশভাগের সময় হয়েছিল। যদিও কোনও সরকারই এই রিপোর্ট নিয়ে চুপ।
অরবিন্দ সুব্রাহ্মমানিয়াম ছাড়াও এই রিপোর্ট তৈরিতে অংশ নিয়েছিলেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিষেক আনন্দ ও বিচারপতি সেন্ডফোর্ড। তারা তিনটি পদ্ধতিতে সার্ভে করেই এই তথ্য পেয়েছেন যা চিন্তার বলেই মনে করছেন। আর তারই ভিত্তিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া মৃতের দৈনিক সংখ্যা হাজারে নয়, ভারতে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও দাবি, দেশে করোনায় মৃত্যুর একটা বড় অংশই হিসাবের বাইরে রয়ে গিয়েছে, কারণ পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাবে বহু মানুষ বিনা করোনা পরীক্ষাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। একইসঙ্গে দেশের টিকানীতিরও সমালোচনা করা হয়েছে।