নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা যুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে লড়াই করছেন এমন ২০ জন পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন সারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। এরমধ্যে শুধু মেদিনীপুর শহরেই রয়েছেন ৯ জন। খড়গপুর টাউন ও গড়বেতায় থানার চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়িতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ জন করে। মোহনপুরে আক্রান্ত ২জন। এছাড়া ডেবরা, বেলদা ও চন্দ্রকোনায় ১জন করে পুলিশ কর্মী অথবা সিভিক ভলান্টিয়ার আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে জেলায় শতাধিক পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন যার মধ্যে মর্মান্তিক ভাবে শহিদ হয়েছিলেন সবং থানার সেকেন্ড অফিসার ৩৮ বছরের অতনু প্রামানিকের। এবার ফের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে পুলিশ কর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় তাই কোথাও যেন একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও তারই মধ্যে দাপিয়ে রাস্তায় নেমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। করোনা বিধি রক্ষায় চলছে কড়া নজরদারি।
স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২৪শে এপ্রিল জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত আগের দিনের চাইতে ৮৫ জন কমে ২৪৬ জন। এরমধ্যে আরটি/পিসিআর পরীক্ষায় ১৩০জন এবং আ্যন্টিজেন ও ট্রুনাট পরীক্ষায় ৯২ ও ২৪ জন করোনা পজিটিভ বলে চিহ্নিত হয়েছেন। এদিনের বড় বৈশিষ্ট্য হল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর খড়গপুর শহরকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল মেদিনীপুর শহর। খড়গপুর শহরে যেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ জন সেখানে মেদিনীপুর শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫জন। এদিন শালবনী করোনা হাসপাতালে ৩ জন ও মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে ১জন মিলিয়ে জেলায় মোট ৪জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
শহরে ৩ জন পুলিশ কর্মী ছাড়াও ২২ জন রেলকর্মী অথবা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। আইআইটি-খড়গপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। বাকি ৯ জন সাধারণ নাগরিক। শহরের ৪৩ আক্রান্তের মধ্যে ৯ জন আইআইটি ক্যাম্পাসের বাসিন্দা। তালবাগিচা থেকে আক্রান্ত ৩ জন। ইন্দা, কমলাকেবিন, গোয়ালাপাড়া, সাউথ ইন্দা ও ট্রাফিক এলাকা থেকে আক্রান্ত ৬জন। এছাড়া আক্রান্ত পাওয়া গেছে খরিদা, শ্রীকৃষ্ণপুর, তলঝুলি, সাঁজোয়াল, সুভাষপল্লী, নিউডেভলপমেন্ট, নিউ সেটেলমেন্ট ও রেলের বিভিন্ন আবাসন থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। খড়গপুর শহরের বাইরে তিন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে পাঁচরুলিয়া, চাঙ্গুয়াল ও মাদপুরের বাড়গেড়িয়া থেকে।
মেদিনীপুর শহরে ৯ জন পুলিশ কর্মী ছাড়াও শহরের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি এমন ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫জন আবার দুটি পরিবারের। এছাড়া তাঁতিগেড়িয়ায় একই পরিবারের ৪৬ ও ২১ বছরের মহিলা, পালবাড়ির ৭৪ ও ৪৯ বছরের একই পরিবারের দুই মহিলা ছাড়াও সিপাহীবাজার, রাঙামাটি, ক্ষুদিরামনগর, হবিবপুর, মহাতাবপুর, কুইকোটা থেকে ২জন করে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন কোতওয়ালি বাজার, কর্নেলগোলা, মিঞাবাজার, মির্জাবাজার, তোড়াপাড়া, নজরুলপল্লী, আবাস, বরিশাল কলোনি ও মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে।
মেদিনীপুর সদরের গুড়গুড়িপাল ও ঝরিয়া থেকে ১জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মেদিনীপুর মহকুমার শালবনী সদর, বড় পাথর কুমকুমি ও মোগলমারি থেকে ৩ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। আনন্দপুরের দিগড়ায় আক্রান্ত ১জন। গড়বেতায় ৩ পুলিশ কর্মী সহ আক্রান্ত হয়েছেন ১১জন। এরমধ্যে দ্বারিগেড়িয়ার একই পরিবারে ৫৮ ও ৩৬ বছরের দুই মহিলা ছাড়াও ময়রাকাটা, অমরগেড়িয়া, আমনপুর, সরগেড়িয়া, ওড়গাঁজা ও অপর্ণাপল্লীতে ১জন করে আক্রান্ত।
খড়গপুর শহরে এদিন আক্রান্ত কিছুটা কম হলেও করোনার মারকাটারি আক্রমন খড়গপুর মহকুমা জুড়েই। ডেবরায় আক্রান্ত ১৭ জন, বেলদা থানা এলাকায় আক্রান্ত ১৬ জন। দাঁতনে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। এছাড়াও সবংয়ে ৭, পিংলায় ২ এবং মোহনপুর থেকে ৩ আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
ডেবরার শ্যামচকের বড় করঞ্জিতে ৫৮ বছরের পুরুষ ও ৪৬ বছরের মহিলা মিলিয়ে একই পরিবারের ২জন আক্রান্ত। বাকি আক্রান্তরা হলেন শ্যমচকের পশ্চিম বেগুনির ২জন এবং ডিঙল, চককাপান, বালিচকের উত্তর গোটগেড়িয়া, বারঘর, ঘোলাই, ডেবরা সদর, বালিচকের কিশোরপুর, রাধামোহনপুরের চকলালপুরের, রঘুনাথপুর,লোয়াদা থেকে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সবং থানার ৭জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে কসবা, লুটুনিয়া, শিতলদা, বলপাই, বিষ্ণুপুর, খাজুরি ও কুন্দরা কাপসদা এলাকা থেকে। পিংলার কুসুমদা ও বাড়খেলনা বারগেড়িয়ায় আক্রান্ত ২জন।
বেলদা থানা এলাকায় ১ পুলিশ কর্মী সহ আক্রান্ত ২০জন। এই আক্রান্তদের মধ্যে মহম্মদপুরে একই পরিবারের ৩৫ বছরের মহিলা ও ৫০ বছরের পুরুষ ও সাবড়া গ্রামের একই পরিবারের ১৯, ৩২ ও ৬৫ বছরের মহিলা রয়েছেন। বাকি আক্রান্তরা রয়েছেন কুলিগেড়িয়া, ত্রিকোনপল্লী, দেউলি, পানিয়াড়া পোরলদা, কোটবাড় সাউরি, খাকুড়দা, জাহালদা,শ্যামসুন্দরপুর সাউরি এবং জানাবাড় হরিহরপুরের।
দাঁতনের তকিনগর, গাজিপুর, কাজিপাড়া গড়মোহনপুর, কেশরম্ভা, মাটিবিরুয়া থেকে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তাছাড়া তুরকার শ্রীকৃষ্ণপুরে একই পরিবারের ২৮ ও ৪৭ বছরের দুই পুরুষ আক্রান্ত। মোহনপুরে দুই পুলিশ কর্মীর পাশাপাশি সিঙারুইয়ে ১জন আক্রান্ত।
ঘাটাল মহকুমায় আক্রান্ত প্রায় ৭৫ জন। এরমধ্যে প্রায় ৫০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে দাসপুর থেকেই। দাসপুরের সেকেন্দারি, সীতাপুর, বৈকণ্ঠপুর, চকসুলতান ও দাসপুর সদরে পারিবারিক সংক্রমনে আক্রান্ত ১১জন। একাধিক সংক্রমনের খবর এসেছে জোতঘনশ্যম, নিশ্চিন্তিপুর,গৌরা, খুকুড়দহ, রাজনগর থেকে। এছাড়া চাঁইপাট, কইজুড়ি, পাঁচগেড়িয়া, কৃষ্ণপুর, কোন্নগর, দামোদরপুর, সোনামুই, মশালচক, জোতকেশব, পলাশপাই, নবীনমনুয়া, জোতগোবিন্দ, উত্তরবাড়, কইগেড়িয়া, সাতপোতা, রাধকান্তপুর, ডোঙ্গাভাঙা, ঢেউভাঙা প্রভৃতি এলাকা থেকে।
ঘাটালের কুশপাতা, কোন্নগর, দিঘা আনন্দপুরে ২জন করে আক্রান্ত। এছাড়া মনোহরপুর গোপমহল, শ্রীরামনগর, আলমচক ও নতুকে আক্রান্ত মিলেছে। চন্দ্রকোনা থানায় ১পুলিশ কর্মীর পাশাপাশি বালা, ইলমবাজার, দক্ষিণবাজার, ঝাঁকরা, হাসিমপুর, ভোলা, ক্ষীরপাই, গাজিপুর,শ্যামসুন্দরপুর, ডিঙল থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। কুয়াপুরে একই পরিবারের ২২ বছরের তরুণ ও ২০ বছরের তরুণী আক্রান্ত।