নিজস্ব সংবাদদাতা: শনিবার রাজ্যের প্রথম দফার ভোট। আট দফায় ২৯৪টি আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ভোট হচ্ছে ৩০টি আসনে। ২০১৯ সালের লোকসভার হিসাবে এই ৩০টি আসনের ২০টিতেই এগিয়েছিল বিজেপি। মাত্র ২বছর আগের সেই সাফল্য অটুট আছে ধরে নিয়েই প্রথম দফায় এগিয়ে থাকার আত্মবিশ্বাস কাজ করছে বিজেপি নেতা কর্মীদের মধ্যে। যদিও বাস্তবে এই আত্মবিশ্বাস কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে কারন প্রথমত লোকসভা আর বিধানসভায় ভিন্ন ইস্যুতে ভোট হয়ে থাকে।
বিশেষ করে গত লোকসভায় ভোট হয়েছিল পুলওয়ামা কান্ড, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মত বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই। যে কারনে বিরোধীদের সামনে আনা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নোটবন্দি, কালো টাকা উদ্ধার ইত্যাদি বিষয়গুলি খুব একটা ফ্যাক্টর হয়নি। দ্বিতীয়ত গত লোকসভায় এই দুই প্রধান দলের বাইরে গিয়ে বিরোধীরা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এবার এই দুটি কারনেরই গুনগত পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট বা সংযুক্ত মোর্চা এবার বেশ কিছু বিধানসভায় ভালো জনসমর্থন পেতে চলেছে তাই ২০১৯ লোকসভার নিরিখে বিধানসভার ফল একই থাকবে এমনটা নিশ্চিত ভাবেই হবেনা। তবুও লোকসভার ভোটই যেহেতু এরাজ্যে এখনও অবধি শেষ জনমতের প্রকাশ তাই সেটাকেই মাপকাঠি ধরে নেওয়া যেতে পারে।
প্রথমেই দেখা যাক ঊনিশের লোকসভার নিরিখে প্রথম দফার এই তিরিশ আসনের কে কোথায় এগিয়েছিল। শুরুতেই বলা হয়েছে এই ৩০ আসনের ২০টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই আসনগুলি হল এগরা, দাঁতন, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, কেশিয়াড়ী, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুন্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, কাশীপুর, পারা, রঘুনাথপুর,শালতোড়া, ছাতনা, রানিবাঁধ, রাইপুর, গড়বেতা এবং মেদিনীপুর। অন্যদিকে তৃনমূল কংগ্রেস যে ১০টি আসনে এগিয়ে ছিল সেগুলি হল পটাশপুর, কাঁথি উত্তর,ভগবানপুর, খেজুরী, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, খড়গপুর(গ্রামীন), শালবনী, বিনপুর, মানবাজার
এবার দেখে নেওয়া যাক এই আসনগুলিতে কে কত ভোট পেয়েছিল? পটাশপুরঃ বিজেপি ৮৪ হাজার ৬৯৩, তৃণমূল ৯৯ হাজার ৪৮। কাঁথি উত্তরঃ বিজেপি ৯১ হাজার ৯৫৯, তৃণমূল ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩। কাঁথি দক্ষিণঃ বিজেপি ৭৪ হাজার ৭৭৭, তৃণমূল ৯৩ হাজার ৭৯২। ভগবানপুরঃ বিজেপি ৭৯ হাজার ৮০৬, তৃণমূল ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৭৯৭। খেজুরিঃ বিজেপি ৯০ হাজার ৯৫৩, তৃণমূল ৯৫ হাজার ৫০৬। রামনগরঃ বিজেপি ৯২ হাজার ৩১৮, তৃণমূল ১ লক্ষ ৮৪। এগরাঃ বিজেপি ১ লক্ষ ৯ হাজার ৫০৯, তৃণমূল ১ লক্ষ ৮১৫।
দাঁতনঃ তৃণমূল ৮৫ হাজার ৭২৪, বিজেপি ৯২ হাজার ৪১৩। কেশিয়াড়ীঃ তৃণমূল ৮৯ হাজার ১৫৮, বিজেপি ১ লক্ষ ৩২। গড়বেতাঃ তৃণমূল ৮৪ হাজার ৫১৭, বিজেপি ৯১ হাজার ৩২৮। শালবনীঃ তৃণমূল ১ লক্ষ ১২ হাজার ৪১৩, বিজেপি ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭০৬। খড়গপুরঃ তৃণমূল ৮৯ হাজার ৬৭৭, বিজেপি ৮০ হাজার ২১০। মেদিনীপুরঃ তৃণমূল ৯৩ হাজার ৭১১, বিজেপি ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩৭২।
বান্দোয়ানঃ তৃণমূল ৯৫ হাজার ০৫৯, বিজেপি ৯৮ হাজার ০৩৯, বলরামপুরঃ তৃণমূল ৬৪ হাজার ৯৫০, বিজেপি ১ লক্ষ ৪১৯। বাগমুণ্ডিঃ তৃণমূল ৪৭ হাজার ৬০৪, বিজেপি ১ লক্ষ ৩১২। জয়পুরঃ তৃণমূল ৫৬ হাজার ৩৪৩, বিজেপি ৮৮ হাজার ০৮৭। পুরুলিয়াঃ তৃণমূল ৬৬ হাজার ২৫২, বিজেপি ১ লক্ষ ২ হাজার ৭৪৯। মানবাজারঃ তৃণমূল ৯৩ হাজার ৮৯৭, বিজেপি ৮৩ হাজার ৩১৪। কাশীপুরঃ তৃণমূল ৭৪ হাজার ৯২৫, বিজেপি ৯১ হাজার ৭৯। পারাঃ তৃণমূল ৫৮ হাজার ৮১৪, বিজেপি ১ লক্ষ ৫৬। রঘুনাথপুরঃ তৃণমূল ৬৭ হাজার ১৯৯, বিজেপি ১ লক্ষ ৯ হাজার ৮৩২।
ঝাড়গ্রাম : তৃণমূল ৮২ হাজার ১৬৯, বিজেপি ৮৩ হাজার ১৮২। নয়াগ্রামঃ তৃণমূল ৮০ হাজার ৯৭৮, বিজেপি ৮৪ হাজার ৩১৬। গোপীবল্লভপুরঃ তৃণমূল ৮২ হাজার ২০৫, বিজেপি ৮৯ হাজার ৩৪। বিনপুরঃ তৃণমূল ৭৬ হাজার ১৯৭, বিজেপি ৭৩ হাজার ১৩৮।
শালতোড়াঃ তৃণমূল ৭৪ হাজার ১৭, বিজেপি ৮৯ হাজার ৭৩। ছাতনাঃ তৃণমূল ৬৪ হাজার ৪৭৯, বিজেপি ৯৫ হাজার ৬৬১। রানীবাঁধঃ তৃণমূল ৭৮ হাজার ১৪২, বিজেপি ৯৩ হাজার ৯৫৬। রায়পুরঃ তৃণমূল ৮০ হাজার ৪২৩, বিজেপি ৮৩ হাজার ৭৭৪।
এবার মনে রাখতে হবে যে এরমধ্যে ১২টি এগিয়ে থাকার অংকটি খুবই কম ব্যবধানে হয়েছিল। এগুলিতে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকার ব্যবধান ছিল প্রায় ৯ হাজার থেকে ১হাজারের মধ্যে। এই কম ব্যবধানে বিজেপি এগিয়ে আছে এগরা, দাঁতন, গড়াবেতা, ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, রাইপুর, বান্দোয়ান এই ৮টি আসনে। অন্যদিকে এই স্বল্প ব্যবধানে তৃনমূল যে ৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছে খেজুরি, শালবনী, খড়গপুর, বিনপুর। অর্থাৎ এই ১২টি আসনে লড়াই হচ্ছে জোরালো। এরমধ্যে আবার খড়গপুর, গড়াবেতা, শালবনী ও ঝাড়গ্রামে জোর টক্কর দেবে সংযুক্ত মোর্চা। সব মিলিয়ে শনিবার কে কতটা সাফল্য ঘরে তুলতে পারবে তার ফল জানা যাবে ২রা মে।