নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৪দিন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার পর বাড়ি ফেরার ৩দিনের মাথায় খবর পাওয়া গেল আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক! ঘটনায় চক্ষু চড়কগাছ স্বাস্থ্য দপ্তরের কারন যে কারনে এঁদের কোয়ারেন্টাইন করা অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমন ঠেকানো তা এতদিনে হয়ে গেলেও হয়ে যেতে পারে। কারন বাড়ি ফেরার পরে তারা পরিবারের সঙ্গে, গ্রামের অন্যান্য লোকের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন!
সোমবার গভীর রাতে ইংরেজি হিসাবে ১ জুন প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী ঘাটাল পৌরসভার ১০নম্বর ওয়ার্ডের ১ মহিলা ছাড়াও ঘাটাল ব্লকের ঘোলা, মোহনপুর ও সেকেন্দারপুর গ্রামে মোট চারজন আক্রান্ত। অন্যদিকে ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ২ ব্লকের চককিশোর, চক সুলতান ও জ্যোত গোবর্ধন এবং দাসপুর ১ ব্লকের উত্তর ধানখালি গ্রামে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। ঘাটাল মহকুমার এই ৮ জনই পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা দিল্লি, মুম্বাই, আহমেদাবাদ থেকে ফিরেছেন। গত ৪৮ ঘন্টায় শুধু ঘাটাল মহকুমাতেই ১৪আক্রান্তের সন্ধান মিলল।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এঁদের নমুনা সংগ্ৰহ হয়েছিল ১৭ মে আর ফলাফল এসেছে ১লা জুন অর্থাৎ ১২দিনের মাথায়। নমুনা সংগ্রহের আরও ৫দিন আগে থেকে এঁরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ছিলেন আর বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন ১৪দিন পুরন করে। আর বাড়ি ফিরে খুশি মনেই সবার সঙ্গে মিশে মিশেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই যদি এঁদের শরীরে কারও করোনার অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে তা বিপদের। সোমবার রাতেই পুলিশ এবং প্রশাসনের তৎপরতায় প্রত্যেককেই বড়মা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে এত পরিমান শ্রমিক ফিরছেন যে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে ২৪ঘন্টার মধ্যেই বা তারপরের দিনই সম্ভব হচ্ছিল। সোমবার অবধি জেলার ১৬টি পয়েন্ট থেকে হাজার হাজার নমুনা সংগ্ৰহ করা হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু প্রতিদিন জেলায় পরীক্ষা হচ্ছিল মাত্র ৬০০নমুনা। ফলে পাহাড় জমতে জমতে বকেয়া নুমনা ৫হাজারের কাছাকাছি হয়ে যায়। একটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে ১১-২৫ মে অবধি শুধু ঘাটাল মহকুমায় নমুনা সংগ্ৰহ হয়েছে ১৩০৫জনের।
নমুনার পাহাড় জমতেই বকেয়া নমুনা পরীক্ষা করার জন্য সাতদিন নমুনা সংগ্ৰহ বন্ধ করে দেওয়া হয় যা আজ মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু করা হয়েছে। এখানে আবার গত ৭ দিনের বকেয়া নমুনা সংগ্ৰহ করতে হবে ফলে চাপ আরও বাড়বে। যদিও বর্তমানে পরীক্ষার ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রায় ৩গুন করা হয়েছে। পরের সমস্যা হল যে পরিযায়ীরা পজিটিভ আসার আগেই বাড়ি ফিরে গেলেন তাঁদের পরিবার সমেত অনেককেই কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। এলাকা ধরে ধরে কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করতে হবে ফলে প্রশাসন ও পুলিশের ওপর চাপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
এদিকে ওই ৮ জনকে ধরে জেলায় আজ ডজন ছোঁয়া থেকে ১জন কম। নতুন আক্রান্ত নিয়ে শালবনি, সবং ও খড়গপুরে তিনজনের সন্ধান মিলেছে। এরমধ্যে শালবনি ও সবংয়ে প্রথম আক্রান্তের সন্ধান মিলল। জেলার এই রেকর্ডে অবশ্য আশ্চর্য্যের কিছু নেই বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা কারন যে পরিমান নমুনার ফলাফল আসতে শুরু করেছে এবং যে পরিমান পরিযায়ী আসতে শুরু করেছে তাতে এই রেকর্ড এখন বারবারই ভাঙার খবর আসতেও চলেছে।
তবে বিপদের কারন অন্য জায়গাতে। ১লা জুন সব হাট করে খুলে যাওয়ায় বাজার ঘাটে লোক বেরিয়ে পড়েছে। মাস্ক পরা বা সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং প্রায় মানাই হচ্ছেনা। ভয়টা এখানেই। কারন পরিযায়ী সংক্রমনের হাত ধরেই এবার ধেয়ে আসছে যে বিপদ তাকে আটকানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ।