নিজস্ব সংবাদদাতা: খোদ মূখ্যমন্ত্রী জমায়েত এড়াতে আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করছেন। তাঁরই নির্দেশে অতিরিক্ত জনসমাগম এড়াতে সরকারি অফিসের সময়সীমা বিকাল ৫টা থেকে কমিয়ে ৪টা অবধি করা হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে সমস্ত সরকারি জনশুনানি। উদ্দেশ্য একটাই মানু্ষের ভিড় কমানো। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং পঞ্চায়েত সমিতিতে দেখা গেল ব্যতিক্রম। রীতিমত জমায়েত করেই ৬টি গ্রামপঞ্চায়েতে কৃষক বন্ধুর চেক বিলি করা হল প্রায় ১২ হাজার মানুষকে। শুক্রবার সরকারি উদ্যোগেই বড়সড় জমায়েত হয় সবং অনাথ বন্ধু পাঁজা প্রেক্ষাগৃহে। চেক নেওয়ার জন্য ঠাসাঠাসি ভিড়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে তরুন থেকে প্রৌঢ়া প্রৌঢ়দের। প্রায় একই অবস্থা ছিল মোহাড়, বিষ্ণুপুর সহ অন্য গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতেও।
সবং গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেছে এদিন প্রায় ২ হাজার কৃষককে চেক বিলি করা হয় শুধু এই গ্রাম পঞ্চায়েত। সর্ব নিম্ন ২০০০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকার চেক নিতে চার দফায় ৫০০ জন করে কৃষককে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। করোনা সতর্কতার সময়ে দাঁড়িয়ে এই ব্যবস্থা কতটা স্বাস্থ্য সম্মত জানতে চাওয়া হলে এক সরকারি আধিকারিক জানান, ‘সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। কোথাও ভিড় জমতে দেওয়া হয়নি। লাইনে কোনও বয়স্ক মানুষ ছিলনা।”
যদিও ছবি বলেছে অন্য কথা। নিয়ম মেনে কোনও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। ছিলনা হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা। কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। আর অজস্র বয়স্ক মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। স্যানিটারি বা হাত ধোওয়ার ব্যাবস্থা। এমনকি নেই কোনো সচেতনতার বার্তা। মুখেও নেই মাস্ক। কৃষকদের কোনও রকম সতর্কতা করা হয়নি।
উপস্থিত কৃষকরা জানিয়েছেন, ”টিভিতে যেভাবে সতর্কতার কথা বলা হচ্ছে বা স্বয়ং মূখ্যমন্ত্রীও যে সাবধানতার কথা বলেছেন এখানে সে সব নজরে পড়েনি। আমরাদের ঘোষণা করা হয়েছে চেক দেওয়া হবে।তাই আমরা চলে এসেছি চেক নিতে না এলে টাকা পাবোনা তাই ভয়ে আমরা এসেছি। এসে আমরা দেখছি এখানে কোনো করোনা নিয়ে কোনো সতর্কতা ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি।”
স্থানীয় অঞ্চল প্রধান সুকুমার বারিক বলেন প্রশাসনিক স্তর থেকে আমাদে জানান হয়েছে।তাই আমরা চেক বিলি করছি। সরকার থেকে করোনা নিয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে তাই আমরা কৃষকদের দুরত্ব বজায় রেখে চেক বিতরণ করছি। সবংয়ের অতিরিক্ত কৃষি আধিকারিক অশোক কুমার মাল জানিয়েছেন, ”আমরা আজকেই শেষদিন বলে ঘোষণা করেছি। এখুনি চেকগুলো না বিলি করলে চেকের সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে। কৃষকরা টাকা পাবেননা তাই এই ব্যবস্থা। নিয়ম নীতি মেনেই চেক বিলি হয়েছে, কোনও সমস্যা হয়নি।”
যদিও সরকারি আধিকারিকদের এই সব যুক্তিকে কুযুক্তি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মানু্ষের জীবন মৃত্যু নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। ভয়ংকর ওই মহামারি যাতে ছড়িয়ে পড়ে তাই বাংলাতেও মহামারি প্রতিরোধ আইন জারি করা হয়েছে। যে আইনের বলে সমস্ত ধরনের জমায়েতই নিষিদ্ধ সেখানে সবং আলাদা করে ব্যতিক্রম হতে পারেনা। এই সহজ সত্যটা উপলব্ধি করেছেন সবংয়ের কৃষকমাণ্ডি সংলগ্ন গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার সেখানেই চেক বিলির সময় প্রতিবাদ করেন তাঁরা। আর তারপরই সিদ্ধান্ত হয় প্রেক্ষাগৃহে চেক বিতরনের।